স্ক্যান করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে আসল ডিবি ডিবির পোশাকে অপরাধ বাড়ায় এই উদ্যোগ

ডিবির জ্যাকেটে কিউআর কোড

সমীর কুমার দে :

হঠাৎ করেই ডিবি লেখা জ্যাকেট গায়ে একদল লোক কারও বাড়িতে হাজির। আসল না নকল ডিবি, এটা বুঝে ওঠার আগেই ঘরে ঢুকে পড়ছে বা কাউকে ধরে গাড়িতে তুলে নিচ্ছে। আবার ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর গাড়িতে তুলে নিচ্ছে ডিবির জ্যাকেট গায়ে থাকা ঐ লোকগুলো। এরপর ডিবি অফিসে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে জানা যাচ্ছে, এরা আসল নয়, নকল ডিবি। ফলে কে আসল, আর কে নকল সেটা এখন থেকে নিশ্চিত হতে পারবেন যে কেউ।

কারণ ডিবি সদস্যদের গায়ে যে জ্যাকেট থাকবে, সেখানে বসানো হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোড। হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে যে কেউ স্ক্যান করলেই নিশ্চিত হতে পারবেন তিনি আসল না নকল। স্ক্যান করার সঙ্গে সঙ্গেই আসল ডিবির পুরো পরিচয় স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। কিউআর কোড যুক্ত জ্যাকেট ছাড়া কোনো ডিবি সদস্য অভিযানে যেতে পারবেন না, এমন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ফলে ভুয়া ডিবির তত্পরতা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা মিলবে। পাশাপাশি বদলে ফেলা হচ্ছে ডিবির জ্যাকেটও। খুব শিগগিরই এই পোশাক চালু হবে।

সম্প্রতি ভুয়া ডিবির তত্পরতা বেশ বেড়েছে। এই ভুয়া ডিবি সদস্যদের গায়েও থাকছে ডিবি লেখা জ্যাকেট। ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধীরা ডিবির মতো হুবহু জ্যাকেট তৈরি করে অপরাধ করছে। জ্যাকেটগুলো বানানো খুবই সহজ। শুধু একটি ছাপ দিয়েই প্রতারকরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সব দায়দায়িত্ব আসে ডিবির কাঁধে। ডিবির জ্যাকেট পরে কাজ করলে থানাপুলিশও মনে করে তারা ডিবি। আমরা তদন্ত করে দেখেছি বাইরের লোকজন ব্যাপকহারে ডিবির জ্যাকেট ব্যবহার করে। এই কারণেই আসল আর নকল চিহ্নিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেকে হারিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ধরা হচ্ছে ডিবি লেখা জ্যাকেট গায়ে। ফলে মানুষের মধ্যে ডিবি নিয়ে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হচ্ছে। অনেক অপরাধীও এই সুযোগ নিয়ে অপরাধ করে যাচ্ছে।

ডিবির দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে ডিবি পুলিশ যে পোশাক পরে অভিযানে যাচ্ছে তা অনেক প্রতারক চক্র বাইরে থেকে তৈরি করে নিরীহ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। যাতে কেউ এভাবে প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য নতুন পোশাক নিয়ে আসা হচ্ছে। কিউআর কোড ছাড়াও পোশাকে এমন কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্হা থাকছে যার কারণে সহজে জালিয়াতি করা সম্ভব হবে না। শিগগিরই এই পোশাক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মধ্যে সরবরাহ করার চেষ্টা হচ্ছে।

অপহরণ, ছিনতাইসহ যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক তত্পরতা ঠেকাতে সাদা পোশাকে অভিযানে না যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের। শৃঙ্খলা বাহিনীতে সাদা পোশাক বলতে বোঝায় ইউনিফর্ম ছাড়া অন্য যে কোনো ধরনের সাধারণ পোশাক। বিভিন্ন সময় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অপারেশনাল অভিযান চালানোর ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে বলা হয়। দেশের সব জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনীকে সাদা পোশাকে অভিযান চালাতে দেখলে পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া মাইক্রোবাসে অস্বচ্ছ কাঁচ ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে।

গত বছরের জুলাইয়ে রাজধানীর বসিলা এলাকা থেকে এমনই একটি চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেফতার চার জন ডিবির ভুয়া পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে বেড়াত। সুবিধাজনক নির্জন স্হানে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা সব লুট করে নিত তারা। অক্টোবরে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার সামনে ডাকাতির প্রস্ত্ততি নিচ্ছিল তিন ডাকাত। তাদের গায়ে ছিল ডিবি লেখা জ্যাকেট। আর সাদা একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর ফেনীর দাগনভূঞায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তাদের সাধারণ পোশাকের ওপর একটি হাতাকাটা জ্যাকেট পরেন। সেটির সামনের দিকে ডানে ইংরেজিতে ‘ডিবি’ লেখা থাকে। বামে থাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লোগো। পেছনে ইংরেজিতে কেবলই ‘ডিবি, ডিএমপি’ লেখা থাকে। এখন যে নতুন পোশাক তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে বুকের ওপরই থাকবে কিউআর কোড। পোশাক তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে, যা শীত ও গরম উভয় ঋতুতে আরামদায়ক। এছাড়া পোশাকে এক ধরনের বিশেষ রং থাকবে, যার বিচ্ছুরণ থেকে আসল-নকল পুলিশের পার্থক্য ধরা যাবে। এমনকি বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে এই পোশাক তৈরি করা হচ্ছে, যেন এই কাপড়টি সাধারণ তো বাজারে পাওয়া না যায়।

এসব ভুয়া ডিবি অনেক সময় হ্যান্ডকাফও ব্যবহার করছে। তারা হ্যান্ডকাফ পাচ্ছে কোথায়? ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, হ্যান্ডকাফ বাইরে পাওয়ার কথা নয়। আমাদের থেকে কিছু জিনিস খোয়া যায়। যারা অপরাধী তারা যে কোনোভাবে হ্যান্ডকাফ ম্যানেজ করে। অনেক সময় তাদের হাতে ওয়াকিটকি থাকে। এসব জিনিস দেখিয়ে অপরাধীরা প্রতারণা করে। মূলত প্রতারণা করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। অনেক সময় ডিবি পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। সাধারণ মানুষ মনে করছে ডিবিই এসব অপরাধ করছে, কিন্তু আমরা (ডিবি) এসব কাজ করি না। আমরা গত এক মাসে অনেকগুলো ভুয়া ডিবির টিম গ্রেফতার করেছি।